মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলির মধ্যে খাদ্যের পরে বস্ত্র বা পোশাকের স্থান। জীবনধারণের জন্য মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন হয়। আর সভ্য ভাবে সমাজে ব...
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলির মধ্যে খাদ্যের পরে বস্ত্র বা পোশাকের স্থান। জীবনধারণের জন্য মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন হয়। আর সভ্য ভাবে সমাজে বেচে থাকতে প্রয়োজন হয় পোশাকের। সেজন্যই আদিমকাল থেকেই মানুষ গাছের ছাল বাকল ও পশুর চামড়া দ্বারা লজ্জা নিবারণ করেছে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের লজ্জা নিবারণের উপকরণেরও পরিবর্তন হতে থাকে। এক সময় পোশাক তৈরি মানব সভ্যতায় একটি শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।গড়ে ওঠে দেশে দেশে তৈরি পোশাক শিল্প।তৈরি পোশাক শিল্প হিসেবে মানব সভ্যতার চেয়ে প্রাচীন না হলেও পোশাক আর মানব সভ্যতা প্রায় সমসাময়িক কালের।
![]() |
ছবি: সংগৃহীত |
তৈরি পোশাকের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রগতি চোখে পড়ার মত। এ শিল্পে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই বরং অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশের এই অর্জন খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যা পাওয়া বাংলাদেশের পোশাক এখন বিভিন্ন দেশের মানুষ পরিধান করছে। বাংলাদেশের পোশাকের প্রশংসা করছে। এটা কম কথা নয়।ষাটের দশকের আগে আমাদের বাংলাদেশে ব্যক্তি উদ্যোগে পোশাক তৈরি করা হতো। ষাটের দশকের শুরুতে আমাদের দেশে পোশাক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে বাণিজ্যিকভাবে পোশাক তেরি শুরু হয়।এই শিল্পে ধীরে ধীরে সাফল্য আসতে শুরু করে। এক সময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে। সেই শুরু। এরপর এই শিল্পকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বাজারে আধিপাত্য বিস্তার করে নেয় আমাদের দেশের তৈরি পোশাক।বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড়াতে সক্ষম হয়। এখন তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য।আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হচ্ছে এ খাত থেকে। আমাদের জিডিপিতে পোশাক শিল্পের অবদান ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
[post_ads]
তবে তৈরি পোশাক শিল্পের এই সফলতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে শ্রমিকদের ঘাম, দু:খ, কষ্ট, বেদনা।কলকারখানার চাকা ঘুরলেইতো উৎপাদন হয়।কিন্তু উৎপাদন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী।আর এই শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। যে শ্রমিকরা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে বিল্পব এনে দিল, দেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপর দাড় করাতে যে শ্রমিকরা আজও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেই শ্রমিকরা বরাবরই অবহেলিত, চিরকাল অবহেলিতিই রয়ে গেল।
যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিক শ্রেণীর অবদান অপরিসীম। কিন্তু সৃষ্টির আদিকাল থেকে এ শ্রমিক শ্রেণী অবহেলিত, বঞ্চিত। ন্যায্য পাওনা আর কর্মঘণ্টা নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য অগণিত শ্রমিক রাজপথে জীবন উৎসর্গ করেছেন। রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছেন। পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমিক আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল স্মরণীয় ঘটনা লেখা আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
![]() |
ছবি: সংগৃহীত |
আজও আমাদের দেশের শ্রমিকরা দৈনিক ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা একাধারে শ্রম দিয়ে গেলেও তাদের জীবনমানের কোন বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়না।যারা দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটায় তাদের মুখ বেদনার ছায়ায় সবসময় আচ্ছন্ন থাকে। গাড়ি বাড়ি বা অভিলাসী জীবনযাপনের জন্য নয় বরং একমুঠো ভাতের জন্য বা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকার জন্য লড়াই করতে করতেই তাদের সারা জীবন পার হয়ে গেল। যারা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে শক্তিশালি করতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে সেই শ্রমিকরা নিজেরাই দিন দিন অর্থনৈতিক দুর্বলতার চাদরে মুড়ে যাচ্ছে। যেন তারা মোমবাতির মত নিজে জ্বলে পুড়ে গলে গিয়ে সবাইকে আলো দিয়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসের পারিবারিক ব্যয়, বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, ছেলেমেয়ের পড়ার ব্যয়ভার বহন করা একজন তৈরি পোশাক শ্রমিকের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।একদিকে মালিকপক্ষের অধিক মুনাফা অর্জন, অন্যদিকে ন্যায্যবঞ্চিত শ্রমিকদের ঊর্ধ্ব মূল্যের বাজারে টিকে থাকতে দিতে হচ্ছে চরম মূল্য। যথাযথ মজুরি না দেয়া, বাসস্থান, পরিবহন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকা, সাপ্তাহিক ছুটি না দেয়া, বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময় কাজ করানো, মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেয়া প্রায় প্রতিটি শিল্পের নিয়মিত সমস্যা।এটা বড় অমানবিক।
[post_ads_2]
এটা বিবেকের প্রশ্ন যে দ্রব্য মূল্যের এই ঊর্দ্ধগতির বাজারে আমরা যেখানে ৫০- ৬০ হাজার টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকরা মাত্র আট হাজার টাকায় সংসার চালাবে কিভাবে। তাও এই আট হাজার টাকা মজুরী পেতেও তাদের বেগ পেতে হয়। আজকের বাজারে আট হাজার টাকায় কিই বা হয়। আট হাজার টাকায় ঢাকা শহরের মত একটা শহরে একজনের টিকে থাকাটাই তো কষ্টকর। এসব শ্রমিকদের এই আট হাজার টাকা বেতন দিয়ে নিজের থাকা খাওয়ার ও দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হচ্ছে পাশাপাশি সংসারকেও দেখতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি মজবুত হচ্ছে।বিশ্বদরবারে আমাদের দেশ নন্দিত হচ্ছে।প্রশংসিত হচ্ছে। আর এই অগ্রযাত্রার নেপথ্যে যে শ্রমিকরা বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা অবহেলিত থেকে যাবে এটা মেনে নেয়া যায় না।সত্যিকার অর্থে দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে আরো গতিশীল করতে হলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে হবে। মালিকরা রক্ত শোষণ করবেন আর শ্রমিকরা রক্তশূন্যতায় ভুগবে, এটা হতে পারে না।
পোস্টটি লিখেছেন-এডভোকেট আজাদী আকাশ।
সুপ্রিয় পাঠক, পোস্টটি সম্পর্কে আপনার কোন মতামত থাকলে নিচে মন্তব্যের ঘরে জানাতে পারেন। এছাড়া আমাদের ব্লগে লিখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
COMMENTS